২০২৫ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য থাইল্যান্ড ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া

২০২৫ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য থাইল্যান্ড ভ্রমণ আরও সহজ হয়েছে, কারণ থাই সরকার ই-ভিসা সেবা চালু করেছে। এখন ঘরে বসেই অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করা সম্ভব, যা ভ্রমণ প্রক্রিয়াকে আরও সুবিধাজনক ও দ্রুত করেছে।

ই-ভিসা সেবার সূচনা

থাইল্যান্ড সরকার ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ই-ভিসা সেবা চালু করেছে। এর ফলে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ সহজ ও স্বচ্ছ হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।

ই-ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

ই-ভিসার জন্য আবেদন করতে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

  1. অ্যাকাউন্ট তৈরি: ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। একটি অ্যাকাউন্ট থেকে সর্বোচ্চ ১০ জনের আবেদন জমা দেওয়া যাবে।

  2. আবেদন ফর্ম পূরণ: প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন ফর্ম পূরণ করুন। পাসপোর্টের বায়োডাটা পেজ এবং ছবি আপলোড করুন (jpg ফাইল, ৩MB এর কম)। পাসপোর্ট থেকে তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফর্মে আসবে; তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করুন।

  3. ডকুমেন্ট আপলোড: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, যেমন ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা বর্তমান অবস্থানের প্রমাণ আপলোড করুন।

  4. ভিসার ধরন নির্বাচন: আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য অনুযায়ী ভিসার ধরন নির্বাচন করুন।

  5. ফি প্রদান: নির্ধারিত ভিসা ফি অনলাইনে পরিশোধ করুন।

  6. আবেদন জমা: সমস্ত তথ্য ও ডকুমেন্ট সঠিকভাবে প্রদান করার পর আবেদন জমা দিন।

  7. ই-ভিসা প্রাপ্তি: আবেদন অনুমোদিত হলে ই-ভিসা ইমেইলের মাধ্যমে প্রাপ্ত হবে, যা প্রিন্ট করে ভ্রমণের সময় সঙ্গে রাখতে হবে।

বিশেষ ক্যাটাগরির ই-ভিসা

থাইল্যান্ড সরকার কিছু বিশেষ ক্যাটাগরির জন্য ই-ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • চিকিৎসা সেবা: কেমোথেরাপি, বড় অস্ত্রোপচার, ক্যান্সার চিকিৎসা এবং হৃদরোগের মতো জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসার জন্য ভিসা আবেদন দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ করা হয়। এক্ষেত্রে থাই হাসপাতাল বা বাংলাদেশে অবস্থিত হাসপাতালের প্রতিনিধির মাধ্যমে দূতাবাসে অনুরোধ জানানো যেতে পারে।

  • সেমিনার ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান: এই ক্যাটাগরির ভিসা আবেদনও সহজ করা হয়েছে, যাতে বাংলাদেশি নাগরিকরা সহজেই থাইল্যান্ডে সেমিনার বা ক্রীড়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস

ই-ভিসার জন্য আবেদন করতে নিম্নলিখিত ডকুমেন্টস প্রয়োজন:

  • পাসপোর্ট: কমপক্ষে ৬ মাসের বৈধতা থাকতে হবে।

  • পাসপোর্ট সাইজ ছবি: সাম্প্রতিক ছবি (jpg ফাইল, ৩MB এর কম)।

  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট: সাম্প্রতিক আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ।

  • ভ্রমণ পরিকল্পনা: ফ্লাইট এবং হোটেল বুকিংয়ের প্রমাণ।

  • অন্যান্য: ভিসার ধরন অনুযায়ী অতিরিক্ত ডকুমেন্টস প্রয়োজন হতে পারে, যেমন সেমিনার বা ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের চিঠি ইত্যাদি।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • প্রসেসিং সময়: ভিসা প্রক্রিয়াকরণে সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবস সময় লাগে। তবে বিশেষ ক্যাটাগরির জন্য এই সময় কম হতে পারে।

  • ফি প্রদান: ভিসা ফি অনলাইনে পরিশোধ করতে হয়। ফি পরিশোধের পর আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

  • যোগাযোগ: কোনো তথ্য বা সহায়তার প্রয়োজন হলে থাইল্যান্ডের দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

প্রশ্নোত্তর

১. সিঙ্গাপুর থেকে ই-টিএ (ETA) থাইল্যান্ডে কিভাবে আবেদন করবেন?

থাইল্যান্ডের ইলেকট্রনিক ট্র্যাভেল অথরাইজেশন (ETA) সিঙ্গাপুর থেকে অনলাইনে সহজেই আবেদন করা যায়।

আবেদন প্রক্রিয়া:

  1. ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন:

    • থাই ইমিগ্রেশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান: https://www.thaievisa.go.th
  2. অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন:

    • নাম, ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট খুলুন।
  3. আবেদন ফর্ম পূরণ করুন:

    • ব্যক্তিগত তথ্য, পাসপোর্ট বিবরণ, ভ্রমণের তারিখ ও উদ্দেশ্য প্রদান করুন।
  4. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন:

    • বৈধ পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে)।
    • সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
    • ফ্লাইট বুকিং ও হোটেল সংরক্ষণের প্রমাণ।
    • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (প্রয়োজনে)।
  5. ভিসা ফি পরিশোধ করুন:

    • অনলাইনে ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে ফি প্রদান করুন।
  6. ETA অনুমোদন পান:

    • অনুমোদনের পর ইমেইলের মাধ্যমে ETA পেয়ে যাবেন, যা ভ্রমণের সময় সঙ্গে রাখতে হবে।

সাধারণত ২৪-৭২ ঘণ্টার মধ্যে আবেদন প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হয়।

২. বাংলাদেশিদের জন্য থাইল্যান্ড ভিসা চালু আছে?

হ্যাঁ, বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য থাইল্যান্ড ভিসা চালু আছে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশিরা ট্যুরিস্ট, বিজনেস, স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক পারমিটসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

প্রাপ্ত ভিসার ধরন:

  • ই-ভিসা: অনলাইনে আবেদন করা যায় (https://www.thaievisa.go.th)।
  • অন-অ্যারাইভাল ভিসা: বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
  • স্টিকার ভিসা: থাই দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।

সর্বশেষ তথ্যের জন্য থাইল্যান্ড দূতাবাস বা অনুমোদিত এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা ভালো।

৩. থাইল্যান্ড ভিসার জন্য কি কি লাগে?

থাইল্যান্ড ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  1. পাসপোর্ট – কমপক্ষে ৬ মাসের বৈধতা থাকতে হবে।
  2. ভিসা আবেদন ফরম – সঠিকভাবে পূরণ ও স্বাক্ষরিত।
  3. পাসপোর্ট সাইজ ছবি – সাম্প্রতিক, নির্ধারিত ফরম্যাটে।
  4. ফ্লাইট বুকিং কপি – আসা-যাওয়ার টিকিটের প্রমাণ।
  5. হোটেল বুকিং/আমন্ত্রণপত্র – থাকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত দলিল।
  6. ব্যাংক স্টেটমেন্ট – শেষ ৩-৬ মাসের আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ।
  7. চাকরির প্রমাণ/ব্যবসার কাগজপত্র – কর্মীদের জন্য নিয়োগপত্র বা ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স।
  8. স্বাস্থ্য বীমা (প্রয়োজনে) – কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে।

ভিসার ধরন অনুযায়ী অতিরিক্ত নথিপত্র লাগতে পারে।

৪. বাংলাদেশে থাইল্যান্ড ভিসা ফি কিভাবে দিতে হয়?

থাইল্যান্ড ভিসার ফি বাংলাদেশ থেকে নিম্নলিখিত উপায়ে পরিশোধ করা যায়:

  1. অনলাইন পেমেন্ট:

    • ই-ভিসার ক্ষেত্রে থাইল্যান্ড ই-ভিসা ওয়েবসাইটে (https://www.thaievisa.go.th) ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড বা অনলাইন ব্যাংকিং মাধ্যমে ফি পরিশোধ করা যায়।
  2. ব্যাংকের মাধ্যমে:

    • বাংলাদেশে অবস্থিত থাইল্যান্ড দূতাবাস নির্ধারিত ব্যাংকে সরাসরি ফি জমা নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে।
    • নির্দিষ্ট ব্যাংকে (যেমন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক) নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে রসিদ সংগ্রহ করতে হয়।
  3. ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে:

    • অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করলে তারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ফি পরিশোধের ব্যবস্থা করে।

ফি ও পদ্ধতি সময়ে সময়ে পরিবর্তন হতে পারে, তাই আবেদন করার আগে থাই দূতাবাস বা ওয়েবসাইট থেকে আপডেট জানা জরুরি।

উপসংহার

থাইল্যান্ডের ই-ভিসা সেবা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুত করেছে। সঠিক তথ্য ও ডকুমেন্টস প্রদান করে অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে থাইল্যান্ড ভ্রমণ এখন আরও সুবিধাজনক। বিশেষ ক্যাটাগরির জন্য বিশেষ সুবিধা থাকায় বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ভ্রমণকারীরা উপকৃত হবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url