বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য নেপালের ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া ২০২৫

নেপাল বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা এই দেশটি পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য নেপালে প্রবেশ সহজতর করা হয়েছে, কারণ নেপাল ভ্রমণের জন্য কোনো পূর্ববর্তী ভিসা প্রয়োজন হয় না। ২০২৫ সালে বাংলাদেশিদের জন্য নেপালের ভিসা সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।


নেপাল ভিসার ধরন

বাংলাদেশি নাগরিকরা মূলত দুই ধরনের ভিসার মাধ্যমে নেপালে প্রবেশ করতে পারেন:

  1. অন-অ্যারাইভাল ভিসা (Visa on Arrival):

    • বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা নেপালে পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশন কাউন্টারে অন-অ্যারাইভাল ভিসা নিতে পারেন।
    • এটি পর্যটন, ব্যবসা, চিকিৎসা ও অন্যান্য স্বল্পমেয়াদী ভ্রমণের জন্য প্রযোজ্য।
    • এই ভিসার জন্য পূর্বে কোনো আবেদন করার দরকার নেই।
  2. অন্যান্য ভিসা:

    • যদি কেউ দীর্ঘ সময় ধরে নেপালে থাকতে চান বা কাজ, পড়াশোনা, ব্যবসা, বা স্থায়ী আবাসনের জন্য যেতে চান, তাহলে আগেভাগে নেপালের বাংলাদেশস্থ দূতাবাস থেকে ভিসা নিতে হবে।

নেপালে অন-অ্যারাইভাল ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

নেপালের বিমানবন্দর বা স্থলবন্দর (যেমন কাঁকড়ভিটা, বিরাটনগর, বা ভৈরহওয়া সীমান্ত) থেকে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পেতে নিম্নলিখিত কাগজপত্র লাগবে:

  1. পাসপোর্ট:

    • ন্যূনতম ছয় মাসের মেয়াদ থাকতে হবে।
    • পুরাতন ও নতুন উভয় পাসপোর্ট গ্রহণযোগ্য।
  2. ভিসা ফি:

    • ১৫ দিনের জন্য: ৩০ মার্কিন ডলার
    • ৩০ দিনের জন্য: ৫০ মার্কিন ডলার
    • ৯০ দিনের জন্য: ১২৫ মার্কিন ডলার
    • ভিসা ফি সাধারণত ডলার, ইউরো, বা নেপালি রুপিতে পরিশোধ করা যায়।
  3. ফেরত টিকিট:

    • নেপাল থেকে ফেরার জন্য কনফার্মড রিটার্ন টিকিটের কপি থাকতে হবে।
  4. হোটেল বুকিং বা আমন্ত্রণপত্র:

    • যদি হোটেলে থাকেন, তাহলে বুকিং কনফারমেশন লাগবে।
    • যদি নেপালের কোনো আত্মীয় বা বন্ধুর বাসায় থাকেন, তবে তাদের কাছ থেকে আমন্ত্রণপত্র নিতে হবে।
  5. যথেষ্ট আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ:

    • ভ্রমণের সময় যথেষ্ট পরিমাণ নগদ অর্থ বা আন্তর্জাতিক ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড থাকা প্রয়োজন।

নেপালের অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়ার ধাপ

১. নেপালে পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশন ডেস্কে যান।
২. অন-অ্যারাইভাল ভিসার ফরম পূরণ করুন।
৩. পাসপোর্ট, ছবি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন।
৪. ভিসা ফি পরিশোধ করুন।
৫. ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুমোদন নিন।
৬. ভিসার অনুমোদনের পর নেপালে প্রবেশ করুন এবং আপনার ভ্রমণ উপভোগ করুন।


স্থলপথে নেপাল যাওয়ার উপায়

বাংলাদেশ থেকে নেপাল স্থলপথে যাওয়ার জন্য ভারতের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। প্রধান রুটগুলো হলো:

  • ঢাকা → কলকাতা → রকসোল → কাঁকড়ভিটা (নেপাল প্রবেশদ্বার)
  • ঢাকা → শিলিগুড়ি → কাঁকড়ভিটা (নেপাল প্রবেশদ্বার)

স্থলপথে যাওয়ার জন্য ভারতীয় ট্রানজিট ভিসা প্রয়োজন। এটি ভারতীয় হাইকমিশন থেকে সংগ্রহ করতে হয়।


নেপালের অন্যান্য ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

১. নেপাল দূতাবাসের মাধ্যমে ভিসা:

  • ঢাকা বা কলকাতায় অবস্থিত নেপাল দূতাবাস থেকে অন্যান্য ভিসার জন্য আবেদন করা যায়।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
    • আবেদন ফরম
    • পাসপোর্টের কপি
    • ছবি
    • আমন্ত্রণপত্র (যদি প্রয়োজন হয়)
    • অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ডকুমেন্টস

নেপাল ভ্রমণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • কারেন্সি: নেপালি রুপি (১ নেপালি রুপি ≈ ০.৮০ টাকা)
  • স্থানীয় ভাষা: নেপালি, ইংরেজি
  • উত্তম ভ্রমণের সময়: সেপ্টেম্বর-নভেম্বর এবং মার্চ-মে
  • পর্যটন আকর্ষণ: কাঠমান্ডু, পোখারা, এভারেস্ট বেস ক্যাম্প, লুম্বিনি

উপসংহার

বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য নেপাল ভ্রমণ সহজ এবং সাশ্রয়ী। অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়ার সুবিধার কারণে এটি খুবই জনপ্রিয় গন্তব্য। যারা পর্যটন, চিকিৎসা, বা ব্যবসায়িক কারণে নেপাল যেতে চান, তারা সহজেই তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেন। তবে যারা দীর্ঘ সময়ের জন্য অবস্থান করতে চান, তাদের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে দূতাবাস থেকে ভিসা নেওয়া প্রয়োজন। নেপাল ভ্রমণের আগে সর্বশেষ আপডেট ও নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে নেপালের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা বাংলাদেশে নেপালের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url